অন্যকে অনুকরণ করে বেশি দূর এগুনো যায় না: অপরাজিতা ঘোষ
প্রকাশিত : ২১:৩৪, ৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ | আপডেট: ১৯:৫৮, ৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৮
পশ্চিম বাংলার টেলিভিশন এবং চলচ্চিত্রের জনপ্রিয় ব্যক্তিত্ব অপরাজিতা ঘোষ। নৃত্য, নাটক, চলচ্চিত্র এবং সর্বশেষ পরিচালনার মধ্য দিয়ে শিল্পাঙ্গনের সবগুলো শাখায় সমান বিচরণের মাধ্যমে নিজেকে অন্য এক উচ্চতায় নিয়ে গেছেন। কলকাতার টিভি সিরিয়ালে যেমন অভিনয় করে দর্শক হৃদয়ে স্থান করে নিয়েছেন। আবার চলচ্চিত্রে অভিনয়ের মাধ্যমে হয়ে উঠেছেন অনন্য। ধুপছায়া, মেঘের পালক, বহ্নিশিখা, রাজা এন্ড গজা, অগ্নিপরীক্ষা, নানা রঙের দিনগুলিসহ অসংখ্যা নাটকে অভিনয় করে পেয়েছেন তারকা খ্যাতি। অন্যদিকে মেঘনাদবধ রহস্য, হেমন্ত, সাহেব বিবি গোলাম, যদি লাভ দিলে না প্রাণে, টেক ওয়ান, ভীতু, সাদা কালো আবছা’র মতো চলচ্চিত্রে অভিনয় করে পেয়েছেন দর্শকপ্রিয়তা। এর মাঝে তিনি কাজ করেছেন হিন্দি ছবিতেও। এছাড়া তিনি ‘স্যাফরন অ্যাশ’ নামে একটি ইংরেজি চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন। যার সুবাদে তিনি পেয়েছেন চিলির একটি আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে সেরা অভিনেত্রীর (শর্ট ফিল্ম-এ) পুরস্কার। ছবিটি বিশ্বের বিভিন্ন উৎসবে প্রদর্শিত হয় এবং ব্যাপক প্রশংসিত হয়।
সম্প্রতি তিনি নাম লিখিয়েছেন পরিচালনায়। রবিন্দ্রনৃত্য নিয়ে তিনি ভিন্নধর্মী একটি ফিল্ম নির্মাণ করেছেন। ‘ডান্স অফ জয়’ নামে সিনেমাটি ইতিমধ্যে বোদ্ধা মহলে বেশ সমাদৃত হয়েছে। তার এই ফিল্ম নিয়ে তিনি বাংলাদেশে এসেছিলেন ষোড়শ ঢাকা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে। সেখানেই একুশে টিভি অনলাইনের সঙ্গে কথা হয় তার বর্তমান কাজের ব্যস্ততা, চলচ্চিত্র ভাবনা ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন আউয়াল চৌধুরী।
ইটিভি অনলাইন: কিভাবে এই শিল্পাঙ্গনের সঙ্গে যুক্ত হলেন?
অপরাজিতা ঘোষ: আমার পরিবার পুরোপুরি সংস্কৃতিমনা। ছোটবেলা থেকেই সংস্কৃতির আবহে আমি বড় হয়েছি। এরপর শান্তিনিকেতনে নাচ গান পড়াশুনার মাধ্যমে নিজেকে তৈরি করেছি। বলা যায় রবিন্দ্রনাথের দর্শনের মাঝেই আমি বড় হয়েছি। আমার বয়স যখন সাড়ে চার বছর তখন আমি নাচের প্রতিযোগিতায় জয়ী হই। আমাকে স্পেশাল প্রাইজ দেওয়া হয়। সবাই হাততালি দেয়। খুব প্রশংসা করে।
ইটিভি অনলাইন: অভিনয়ে কিভাবে আসলেন?
অপরাজিতা ঘোষ: হঠাৎ করেই অভিনয়ে আসা। এর জন্য কোনো পরিকল্পনা ছিল না। ইচ্ছে ছিল বিজ্ঞানী হওয়ার। কিন্তু আমাকে অভিনয়ে নিয়ে আসা হলো। এরপর কাজ করতে করতে অভিনয়ের প্রেমে পড়ে যাই। মেঘা সিরিয়ালে অভিনয় শুরু করি। এ পর্যন্ত অসংখ্যা নাটকে কাজ করেছি। এরপর চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছি। এখনো করছি। সাহেব বিবি গোলাম, চতুরঙ্গ, হেমন্তসহ আরো অনেকগুলো ছবিতে কাজ করেছি। সামনে একটি হিন্দি ছবিও মুক্তি পাবে।
ইটিভি অনলাইন: বাংলাদেশে এসে কেমন লাগছে?
অপরাজিতা ঘোষ: অসম্ভব ভালো লাগছে। এখানকার লোকজন অনেক বেশি অতিথিপরায়ন। অনেক বেশি খাওয়াতে চায়। খুব যত্ন করে, যা হয়ত আমরাও পারিনা। এখানকার পরিবেশ, মানুষগুলো অনেক বেশি আপন মনে হয়। সত্যি আমি খুবই খুশি। সুযোগ পেলেই বেড়াতে আসবো।
ইটিভি অনলাইন: অভিনয় থেকে নির্মাণ কিভাবে সম্ভব হলো?
অপরাজিতা ঘোষ: একজন মানুষ যদি চেষ্টা করে তার পক্ষে সবই সম্ভব। আমি যখন অভিনয় করি তখন খেয়াল করতাম লাইট, ক্যামেরা এসবের পজিশন। ক্রুরা কিভাবে কাজ করছে, শটের এঙ্গেলগুলো কিভাবে নিচ্ছে। এ ছাড়া পরিচালনার জন্য আমি এক বছর এসিসট্যন্ট ডিরেক্টর হিসেবে কাজ করেছি। চেষ্টা করেছি পরিচালনার আগে প্রত্যেকটি বিষয় সম্পর্কে জানার। তারপর নির্মাণে হাত দেই। পরিচালনা করি ‘ডান্স অফ জয়’।
ইটিভি অনলাইন: আপনি রবিন্দ্রনৃত্য নিয়ে ‘ডান্স অফ জয়’ নির্মাণ করেছেন, এমন একটি বিষয় বস্তু কেন বেছে নিয়েছেন?
অপরাজিতা ঘোষ: রবিন্দ্রনাথকে আমি আমার জীবনের অংশ মনে করি। যাদের নাচ দিয়ে ডকুফিল্মটা করেছি তাদেরকে খুব কাছ থেকে দেখেছি। আমি চেয়েছি তাদের এই কাজগুলো যেন হারিয়ে না যায়। তার মধ্যে রয়েছেন নৃত্যগুরু শঙ্কর নারায়ণ ও জিতেন সিং। আর অমিতা সেনের সাক্ষাৎকারের রেকর্ডিং ব্যবহার করেছি। রবিন্দ্রনৃত্যে তাদের অবদানকে সম্মান জানানোর জন্য কাজটি করেছি। ফিল্মটি দেখে অনেক বড় বড় লোকদের কাছ থেকে রিভিউ পেয়েছি। প্রসংশা পেয়েছি।
ইটিভি অনলাইন: পরিচালনায় কে আপনাকে বেশি উৎসাহ দিয়েছে?
অপরাজিতা ঘোষ: বাবা আমাকে বেশি উৎসাহ দিয়েছে। সব সময় পাশে থেকে সাহস যুগিয়েছে। কখনো হতাশ হতে দেয়নি। আর আমার বোন। তার সঙ্গে আমি সব কিছু শেয়ার করি। সে একজন সাইনটিস্ট। অন্য জগতের মানুষ হলেও সব সময় আমাকে পরামর্শ দিয়েছে। এখনো দিচ্ছে। আমি যখন কাজটি করছি তখন বাবা ভিষণ অসুস্থ। তার বাইপাস করা হয়। আমার তখন ছবির এডিটিং চলছিল। আমি প্রতিদিন হাসপাতালে গিয়ে বাবাকে কাজের কথা শুনাতাম। বাবা সব শুনে মাঝে মাঝে আমাকে পরামর্শ দিত। ওই সময় বাবার ছবিটা দেখার সুযোগ হয়নি। পরে কলকাতায় স্ক্রীনিং এর সময় তিনি দেখেন এবং খুব খুশি হন।
ইটিভি অনলাইন: একজন নারী নির্মাতা হিসেবে কাজের ক্ষেত্রে কি কোনো সমস্যা মনে হয়েছে?
অপরাজিতা ঘোষ: মোটেই না। আমি যাদেরকে নিয়ে কাজ করেছি। বলা যায় আমার টিমের সবাই পুরুষ। সুতরাং এটাকে আমি কোনো সমস্যা মনে করি না। এখানে পার্থক্যর কোনো সুযোগ নেই। চেষ্টা করলে সবাই সব কিছু করতে পারে।
ইটিভি অনলাইন: আপনি একজন অভিনেত্রী এবং নির্মাতা, আপনার অভিজ্ঞতা থেকে যদি কোনো পরামর্শ দেন?
অপরাজিতা ঘোষ: আভিনয় আমার জীবনের সব। আমি এ সম্পর্কে একটি কথা বলতে পারি। অভিনয়টা নকল করার নয়। নকলের মাধ্যমে কোনো ভালো সৃস্টি হতে পারে না। আমি যেটা শিখেছি সেটা সহজ স্বাভাবিকভাবে করার চেষ্টা করি। অন্যকে অনুকরণ বা নকল করে বেশি দূর এগুনো যায় না। আমার কাছে অভিনয় করতে ভালো লাগে। সেটা করে যেতে চাই। তবে নিজের পরিচালিত কোনো কাজে অভিনয় করবো না।
ইটিভি অনলাইন: পরবর্তী নির্মাণের কাজ কবে থেকে শুরু করবেন?
অপরাজিতা ঘোষ: এখনো বলতে পারছিনা। স্ক্রীপ্ট গল্প তৈরি হচ্ছে। আমার টিমের সদস্যরাও আর দেরি করতে চাচ্ছে না। সবাই তাগাদা দিচ্ছে। সব কিছু ঠিক থাকলে, ফাইন্যান্স ঠিক থাকলে দ্রুত কাজ শুরু করবো। পরবর্তী কাজটা হবে ফিকশন, একেবারে নিজস্ব গল্পের ওপর। মানুষের জীবনের গল্প নিয়েই তৈরি হবে।
ইটিভি অনলাইন: আপনাকে অসংখ্যা ধন্যবাদ সময় দেওয়ার জন্য।
অপরাজিতা ঘোষ: আপনাকে ও একুশে টিভি অনলাইনকেও ধন্যবাদ।
এসি/